দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ভঙ্গুর দশা কাটিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে (জাপা) গতি ফিরে এসেছে। দলটি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে জোরেসোরে। নতুন জোট গঠনের পর সারাদেশে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে জাপা। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন,আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি দেখা দেয়। তবে নানা নাটকীয়তার পর এরশাদ ও তার অনুসারীরা নির্বাচনে অংশ নেন। ওই সময় জাপায় আবারও ভাঙন দেখা দেয়। প্রবীণ রাজনৈতিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা এরশাদের জাপা থেকে বের হয়ে আসেন। গঠন করেন জাতীয় পার্টি (জাপা)। এরপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাপার তিন নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেওয়া হয়। খোদ পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে প্রধামন্ত্রীর বিশেষ দূত করা হয়। একইসঙ্গে জাপা মন্ত্রিসভায় ও বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতে থাকে। দলে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়।
এছাড়া রুহুল আমিন হাওলাদরকে মহাসচিব থেকে সরিয়ে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দায়িত্ব দেওয়ার পর দলে আবারও গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। জিএম কাদরেকে কো-চেয়ারম্যান ও একই সময়ে আবারও রুহুল আমিন হাওলাদরকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে, রওশন এরশাদের সঙ্গে ব্যাপক গ্রুপিংয়ে জড়ান এরশাদের আর্শীবাদপুষ্ট নেতারা। পরে অবশ্য চাপের মুখে রওশন এরশাদকেও কো-চেয়ারম্যান করতে বাধ্য হন এরশাদ।
দীর্ঘদিন থেকে একই সঙ্গে সরকারের মন্ত্রিসভায় ও বিরোধীদলে থাকা এবং দলে বিরাজমান গ্রুপিংয়ের কারণে জাপার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন আগের অবস্থার থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাপা।
এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনমুখী রাজনীতি করতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। এরই মধ্যে দলটি ৫৮ দল নিয়ে নতুন মহাজোট ঘোষণা করেছে। বেশ কয়েকটি ইসলামী দল নিয়ে গঠিত এ জোট ঘোষণা করা হয়েছে গত মে মাসে। এরপর থেকে জাপাকে দলীয় নানান কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেখা গেছে। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সভা-সমাবেশ করছে জাপা।
জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। ইতোমধ্যে, সারাদেশের ৩০০ আসনে প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো আবারও নানানভাবে যাচাইবাছাই করা হচ্ছে।
কথা হয়, জাপার যশোর জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি নতুন সময়কে বলেন, আগামী নির্বাচনে সামনে রেখে জাপা ব্যাপকভাবে সাংগঠনিক কাজ করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন থেকেই নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলে এখন গতি ফিরে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জাপার সেক্রেটারি রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সব বড় দলের মতো জাপাও নির্বামুখী রাজনীতি করছে। প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সারাদেশে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাপা। জোট গঠন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ানো হয়েছে।
অবাধ নির্বাচন হলে জাপা ভালো করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
Comments
Post a Comment