মাত্র কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর জনজীবন। কয়েক মিনিটেই বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট আর ভারী বর্ষণে নাগরিক জীবনে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয় তা অবর্ণনীয়।
ঢাকার দুই সিটি কপোরেশন ছাড়া আরও ছয়টি সংস্থা নগরবাসীর দীর্ঘদিনের এই সমস্যা নিরসনে কাজ করছে। হাজার হাজার কোটি টাকার নানা প্রকল্প সম্পন্ন ও চলমান থাকলেও উন্নয়নের নামে বিশেষত বর্ষা মৌসুমে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, পর্যাপ্ত ও কার্যকরী ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, দখল-দূষণে ভরাট খাল, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে রাজধানী জলাবদ্ধমুক্ত হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। তবে নগরীর এই সমস্যা নিরসনে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নতুন সময়কে নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা ওয়াসা,পরিবেশ অধিদপ্তর, ভূমি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত। এছাড়া ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডও এর সঙ্গে রয়েছে।দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এই সংস্থাগুলো কাজ করছে। তবে এখনো হালকা থেকে কিছুটা বেশি বৃষ্টি হলেই নগরে যে চিত্র দেখা যায়, তা সবারই জানা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ লাইন রয়েছে দুই হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। আর ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন রয়েছে ৩৭০ কিলোমিটার। যদিও ঢাকা ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকা ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। বিভিন্ন এলাকায় জমা হওয়া পানি নিষ্কাশনের জন্য নগরীর ২৫০টি পাম্প থাকলেও ব্যবহৃত হচ্ছে ১৬০টির মতো।মত পার্থক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজধানীর ২৬টি খাল উদ্ধারে একমত হয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।তবে ইতোমধ্যেই এক মেয়র তা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তবে বড় বিষয় হলো এক সংস্থা অন্য সংস্থার উপর দায় চাপাচ্ছে।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান নতুন সময়কে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমরা ২৮০ কিলোমিটার ড্রেনের উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ করবো। আমাদের প্রায় এক হাজার কিলোমিটার ড্রেন আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করছি।’
আপনারা কাজ করছেন, তারপরও কেন জলাবদ্ধ মুক্ত হচ্ছে না রাজধানী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পানি বের হওয়ার জন্য খালের প্রয়োজন। কিন্তু রাজধানীতে কেমন খাল আছে তা তো আপনারা ভালোই জানেন।’
একই পদে ডিএনসিসিতে দায়িত্বরত প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ বলেন, উত্তর সিটিতে ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। আমরা এগুলো নিয়মিতই পরিষ্কার করি। উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ সব সময়ই চলে। জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ার পেছনে তিনিও আসাদুজ্জামানের মতই বক্তব্য দেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ২৬টি খাল উদ্ধারে একমত হয়েছি। ইতোমধ্যেই অভিযান শুরু হচ্ছে। উদ্ধারও হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।
রাজউকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্প্রতি ৫ হাজার ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১শ’ ফুট চওড়া খাল খনন ও দৃষ্টিনন্দন করাসহ অন্যান্য কাজ হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘বৃষ্টি হয় ১০০ মিলিমিটার। ড্রেন বানানো হয়েছে ২০ মিলিমিটারের। পানি তো জমবেই। বর্ষাকালে শুরু হবে খোঁড়াখুঁড়ি। ড্রেন থাকবে বন্ধ।কিভাবে পানি বের হবে। আবার রাজধানীর চারপাশের খালই ভরাট হয়ে রয়েছে। পানি কোন দিক দিয়ে বের হবে। তাই পানির প্রবাহ যেন ঠিক থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অপরিকল্পিত নগরায়ন।সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও জলাবদ্ধতার কারণ। ওয়াসা আজ কাজ করবে তো, পিডিবি করবে কাল। সিটি করপোরেশন করবে পরশু।সুষ্ঠু পরিকল্পনায় সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া জলাবদ্ধ মুক্ত নগরের দেখা পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার এই দুর্ভোগ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই নগরবাসীর।সংশ্লিষ্ট ও জনপ্রতিনিধিরা বরাবরই আশ্বাস দিচ্ছেন। অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তবে তা যতটুকু হওয়ার দরকার তা হচ্ছে না। আর এ কারণেই এবার এ সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।দুই মেয়রের পাশাপাশি কয়েকজন মন্ত্রীকেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
Comments
Post a Comment