দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এ বছরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কোনো দেশের সঙ্গে এটাই হবে বাংলাদেশের প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এফটিএ হলে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি বা রফতানিতে কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হবে না। তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এফটিএ নিয়ে ঐকমত্য হয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। ওই বৈঠকের পর দুই দেশের কূটনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসাবিহীন যাতায়াতে একটি চুক্তি এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা ও তথ্য বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৩টি সমঝোতা স্মারকে সই হয়। দুই নেতার বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা চলতি বছরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য যে আলোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার তা দ্রুত শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা একটা খুবই ভালো দিক। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে কারও এফটিএ নেই। যদি ২০১৭তে এফটিএ হয় তাহলে এটাই হবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশের প্রথম এফটিএ। আমার মনে হয় দুই দেশের মধ্যে একটি বড় অগ্রগতি। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্য বছরে আট কোটি ডলারের মতো। এ চুক্তি হলে দু’দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, এটা বাড়ানোর জন্যই আমরা ২০১৩ থেকে আলোচনা করে আসছি। দুই দেশের বাণিজ্যে এখন যেসব শুল্ক ও অশুল্ক বাধা রয়েছে তা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে অপসারণ করা যাবে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফরকে কেন্দ্র করে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। ৩৫ দফার এই যৌথ বিবৃতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতাও হয়ে গেছে। এই প্রথম বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার একটি যৌথ বিবৃতি আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক একটি কাঠামো (ফ্রেমওয়ার্ক) পাচ্ছে। আগে যেটা ছিল যে, এই সম্পর্কটা ভাসা ভাসা থাকত। হয়তো কোনো সময় কিছু একটা বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেকদিন পর আমরা ভুলে যেতাম কী হয়েছে। একটি চুক্তি ও ১৪টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। এই যৌথ ঘোষণায় দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক সম্পর্কের রূপরেখাও আরও স্পষ্ট হবে বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তিনদিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। শুক্রবার সকালে সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে টাইগার গেটে শেখ হাসিনা তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। প্রতিবেশী এই দুই দেশের নেতা প্রথমে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। তারপর দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলি হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। শেষে করবীতে দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হয়।
Comments
Post a Comment