নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক জাল ভোট প্রদান ও অনিয়মের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বর্তমান কমিশনের আমলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনা। নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক জাল ভোট প্রদান ও অনিয়মের ঘটনার দায়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার উপনির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিচ্ছে ইসি। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
এর আগে মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র দখল ও জোরপূর্বক জাল ভোট দেয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৮ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক জাল ভোট প্রদান ও অনিয়মের ঘটনার দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি দিয়েছে ইসি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টকে চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর বা পদানবতি বা তার বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি দুই বছরের জন্য স্থগিত রাখতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ছোট-বড় সব নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের স্বার্থে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেও যেসব স্থানে সহিংসতা ও জোরপূর্বক ভোট দেয়ার ঘটনা ঘটছে সেগুলোর বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত করছি। আইন অনুযায়ী এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেসব নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় প্রকাশ্য সহিংসতা, মারামারি, কেন্দ্র দখলসহ নির্বাচনী অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে কমিশন তদন্ত করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীও বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় যারা দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমিশন চায়, এখনই দায়ীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে না গেলে নির্বাচনী সহিংসতার কালচার থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।
প্রসঙ্গত, মেহেরপুরে অভিযোগ ছিল, ভোটের আগের রাতে ওই কেন্দ্র দুটিতে ব্যালটে সিল মেরে বক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় কমিশনের তদন্তে ওই দুই কেন্দ্রের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘কর্তব্য পালনে চরমতম অবহেলা প্রদর্শনের’ প্রমাণ মিলেছে।
মেহেরপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেহেরপুর-১ কেন্দ্রে এসআই কার্তিক চন্দ্র পাল, তিনজন এএসআই ও ১৪ জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য দায়িত্বে ছিলেন। এর বাইরে লাঠিসহ আনসার ছিলেন আরো ১৫ জন। সবমিলিয়ে ওই কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন ২৯ জন।
একই হারে মেহেরপুর-২ কেন্দ্রে এসআই ফকরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৪ অস্ত্রধারীসহ ২৯ জন দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ব্যালটে সিল মেরে বক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালী ৫৮ (২৯+২৯) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়েছিল।।
গত ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের ঘটনায় দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। এছাড়া ২৫ এপ্রিল সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যাপক সংঘর্ষ, জাল ভোট ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। এতে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বাতিল করে ইসি।
Comments
Post a Comment