পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। সাতদিনে ভাঙনে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার দুটি গ্রামের ১৫০ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গ্রাম দুটির আরো দেড় হাজার পরিবার।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সাতদিনে পদ্মা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা নদীতে স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র স্রোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুলেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রাম ও নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
রোববার কলমিরচর ও ঈশ্বরকাঠি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তাদের বসতঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছ কেটে নিচ্ছেন। পরিবারগুলো কোথাও আশ্রয় না পেয়ে পাশের গ্রামগুলোর ফসলি জমিতে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ কেউ ছাপড়া ঘর করে থাকছেন।
নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মাসুদা বেগম বলেন, পদ্মার ভাঙনে ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বসতবাড়ির একটি অংশও বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মার ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। বসতবাড়ি ফসলি জমি সব কেড়ে নিল পদ্মা নদী। কেন সরকার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয় না, একটি বাঁধ নির্মাণ করে না।
জাজিরা উপজেলার কলমিরচর গ্রামের কৃষক ইদ্রিস মাদবর। ফসলি জমির আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দেই ছিলেন। তিনি বলেন, সাতদিনে সব শেষ। এখন পথের ফকির হয়ে গেলাম।
জাজিরা উপজেলার কুলেরচর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মাদবর বলেন, গত বছর আমার এলাকায় নদী ভাঙনে ৮০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ বছর ভাঙন শুরু হয়েছে, আল্লাহই জানেন এবার কত মানুষ গৃহহীন হবে। আমরা তাদের ত্রাণ সহায়তা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিত বৈদ্য বলেন, এ এলাকাটি ভাঙনপ্রবণ। প্রতিবছরই এখানে পদ্মা নদীর ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাজিরার কুলেরচর থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৮ হাজার ৯শ মিটার বাঁধ দেয়া হবে। ১২৯৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এ এলাকার ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের নগদ অর্থ, তাঁবু ও টিন দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। যারা সর্বস্ব হারিয়েছে তারা চাইলে খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হবে।
Comments
Post a Comment